কল্লা কাটা - কল্লা কাটার কাহিনী।
( দুদিন ধরে একটি ঘটনা মাথায় চক্কর দিচ্ছে,একা একা হাসছি, বিবিসির ফোন ইন শুনে ইচ্ছে হলো সবার সাথে শেয়ার করার ।)
গত পরশু সন্ধ্যার সময় ছোটখাট একটা চায়ের দোকানে বসে আছি। এ দোকানে যারা বসে তাদের বেশিরভাগ সাধারণ শ্রমিক।আমার পাশে বসে ছিলেন একজন রিকশাচালক, চল্লিশোর্ধ বয়স। আরেকজন দোকানের মালিক, চেহারা শক্তমক্ত।
রিকশাচালক চাচার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশে গণহারে মাথা কাটা হচ্ছে। চারিদিকে অসংখ্য মানুষ মাথা কাটতে নেমেছে।জায়গায় জায়গায় তাদের ধরা হচ্ছে।
দোকানের মালিক সম্ভবত খবর শুনেন নিয়মিত। তিনি বিষয়টি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন।
গত পরশু সন্ধ্যার সময় ছোটখাট একটা চায়ের দোকানে বসে আছি। এ দোকানে যারা বসে তাদের বেশিরভাগ সাধারণ শ্রমিক।আমার পাশে বসে ছিলেন একজন রিকশাচালক, চল্লিশোর্ধ বয়স। আরেকজন দোকানের মালিক, চেহারা শক্তমক্ত।
রিকশাচালক চাচার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশে গণহারে মাথা কাটা হচ্ছে। চারিদিকে অসংখ্য মানুষ মাথা কাটতে নেমেছে।জায়গায় জায়গায় তাদের ধরা হচ্ছে।
দোকানের মালিক সম্ভবত খবর শুনেন নিয়মিত। তিনি বিষয়টি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন।
গুজব কিভাবে ছড়ায়,তাও বুঝাচ্ছেন।
আমি যখন বসেছি তখন গরম গরম কথোপকথন হচ্ছে। বিতর্ক তখন তুঙ্গে। দুজনের চোখমুখ কড়মড়ে।দোকানদার মনপ্রাণ দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন,এটা একটা গুজব।আর রিকশাচালক চাচা চরম উত্তেজিত হয়ে বলছেন এসব সত্যি।তাহলে এত মানুষকে মারা হচ্ছে কেনো ! এক জায়গায় বেগের ভেতর মাথা পাওয়া গেছে, এটাই ঘুরেফিরে বারবার বলছেন তিনি।
উত্তেজনার তীব্রতায় দুজনই কথার মাঝে মাঝে দুএকটা অশ্লিল শব্দ উচ্চারণ করছেন।
হঠাৎ করে মাইকিং এর আলোচনা উঠল।তখন দোকানে আগুন লাগে অবস্থা ।।তিন তিন দিন কল্লাকাটা নিয়ে মাইকিং করা হয়েছে, যেমন তেমন ব্যাপার না এটা। পুলিশের মোবাইল নাম্বারও দেয়া হয়েছে।
উনাদের আলোচনায় যোগ দিতে ইচ্ছে হলো। আমি বললাম,চাচা, মাইকিং কখন করা হলো?
রিকশাওয়ালা চাচা হড়হড় করে বললেন, " তিনদিন করেছে মাইকিং,আমার নিজ কানে শুনছি,পুলিশের নাম্বারও দিছে, এরপরেও কিভাবে বলো এটা গুজব।যখন কল্লা নেবে তখন বুঝবে।এখন বাড়িতেও ঢুকছে কল্লা কাটার জন্য ।একজন গল্প করল।
আমার তখন হাসি ধরে রাখা অসম্ভব মনে হচ্ছিল। হাসতেও পারছিলাম না।পরিস্থিতি চরম আবার চাচাও বয়সী। দোকানদার এটাও যুক্তি দিয়ে বুঝাচ্ছিলেন। " মাইকিং করা হয়েছে কাউকে সন্দেহ করে না পেটানোর জন্য।সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে।
কল্লাকাটা নামে দেশে মিথ্যা গুজব
রিকশাচালক এটা মানতেই পারছিলেন না।তিনি নিজ কানে মাইকিং শুনেছেন।কল্লা কাটা থেকে সাবধান।দোকানদার একটা জটিল শব্দ উচ্চারণ করে বললেন, এটা বাইরে গিয়ে বলে দেখো। .......কির চামড়া থাকবে না।মাইকিং করা হয়েছিল ঠিকই।সেটা এরকম ছিল," কল্লাকাটা নামে দেশে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।তা বিশ্বাস করবেন না।কাউকে যদি সন্দেহজনক মনে হয়,তাহলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশকে খবর দিন। মোবাইল নং.......। "
রিকশাচালককে আমিও বুঝালাম, মাইকিং এ এটাকে গুজব বলা হচ্ছে।অবশ্য দোকানদার চাচার হুশিয়ারি শুনে তিনি অনেকটা থেমে গিয়েছিলেন।পরে আরেকজন আলোচনায় যোগ দেন, তিনিও বিষয়টা যে গুজব,তাই বুঝালেন।তবে চাচার মুখ কালো থেকে কালো হচ্ছিল।
মাইকিং এ বলা হয়েছে যা,,তিনি বুঝেছেন ঠিক তার বিপরীত।।
কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে সাবধান করা হয়েছিল বুঝেশুনে চলাফেরা করার জন্য।সব জায়গায় নাকি মাইক দিয়ে কল্লা কাটার কথা বলা হচ্ছে।সেই রহস্য ও এখন বুঝতে পারছি।
( জুলাই ২০১৯, সারা দেশে পদ্মা শেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগবে এগুজবে ছেয়ে যায় দেশ।প্রথমে ফেসবুকের পাতা,তারপর মাঠ-ঘাট,হাট-বাজার সবখানেই কল্লা কাটার খবর।কল্লাকাটা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। গণপিটুনিতে মৃত্যুবরণ করা কেউই দোষী ছিলেন না। )
লেখকঃ - সাইফুল মুন্না।
২৭ জুলাই ২০১৯, ৯.৩২ অপরাহ্ণ।